সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দম্পতি। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে একই উপজেলায় কর্মরত আছেন ওই দম্পতি।
নিজ এলাকায় সরকারি সার, বীজ ও উপকার ভোগীদের তালিকা করে প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করতেন ওই দম্পতি।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুনু মিয়া ও নিশাত জেরিন ভাবনা। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই একই উপজেলায় কর্মরত। তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় লোকজন লিখিত অভিযোগ করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কাছে।
অর্ধশতাধিক কৃষক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে বলা হয়, একই এলাকায় দীর্ঘ কয়েক বছর কর্মরত থাকায় জুনু-ভাবনা দম্পতি জড়িয়েছেন বিভিন্ন অন্যায়-অপকর্মে। সরকারি সার, বীজ ও প্রণোদনা আত্মসাৎ করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেরা হয়েছেন অঢেল সম্পত্তির মালিক। জুনু মিয়ার বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ৫নং উত্তর ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের ভেলকোনা গ্রামে। সরকারি বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সুবিধাপ্রাপ্তির তালিকায় নাম লেখাতে জনপ্রতি বছরে এক হাজার টাকা করে জুনুকে উৎকোচ দিতে হতো। এছাড়া সরকারি প্রদর্শনী যারা পেতেন তারাও বিশেষ বিবেচনায় তালিকা ভুক্ত হতেন। প্রদর্শনীর প্রাপ্ত টাকা কৃষকদের প্রদান না করে নিজেদের ইচ্ছে মতো টাকা দিতেন জুনু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুনু মিয়া হতদরিদ্র ছিলেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে চাকরি পাওয়ার পর তার ভাগ্যের চাকা বদলে যায়। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী ভেলকোনা গ্রামে বেড়ে উঠা জুনু রাতারাতি উপজেলা পরিষদের পাশে একটি জায়গা ক্রয় করেন এবং সেখানে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করছেন। জায়গা ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ বাবদ প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, জুনু ও তার স্ত্রী ভাবনা কৃষি অফিসের মাঠ কর্মী। ধান, সবজিসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য রোগাক্রান্ত হলে তাদের পরামর্শ নিতে গেলে তারা মাঠে যেতে রাজি হন না। জুনু ও তার স্ত্রীকে সরেজমিনে কৃষি ক্ষেতে নিয়ে যেতে কৃষকদের গাড়ি ভাড়া ও উৎকোচ হিসেবে নগদ হাজার খানেক টাকা দিতে হয়। কৃষকদের জন্য সরকারি কোনো সহায়তা আসলে প্রকৃত কৃষকদের বঞ্চিত করে নিজের নিকট আত্মীয় কারো নাম উপকার ভোগীদের তালিকায় দিতেন জুনু। এতে উপকারভোগীর কাছ থেকে ভাগাভাগি করে টাকা নিয়ে থাকেন ওই দম্পতি।
স্থানীয় কৃষক দিলাল মিয়া, আতর আলী ও সেলিম মিয়া বলেন, জুনু মিয়া ও নিশাত জেরিন ভাবনা ইচ্ছামতো সরকারি বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ তাদের নিজস্ব তালিকাভুক্ত মানুষদেরই বিতরণ করতেন। এতে বঞ্চিত করা হয়েছে প্রকৃত কৃষকদের। কৃষি জমি ও কৃষি কার্ড থাকার পরও বছরের পর বছর সরকারি সার, বীজসহ যাবতীয় প্রাপ্য হতে সাধারণ কৃষকগণ বঞ্চিত। জুনু ও ভাবনা ভুয়া তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা হতে ভাড়া করা লোকজন দিয়ে সার, বীজ ছাড়িয়ে খোলা বাজারে লোকজন দিয়ে সিন্ডিকেটের নিকট বিক্রি করেন। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে।
তারা বলেন, এলাকায় জুনু মিয়ার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অনিয়ম-দুর্নীতি করে স্বামী-স্ত্রী সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ফেঞ্চুগঞ্জ সদরের আবাসিক এলাকায় জায়গা ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ঘুষ না খেলে ও দুর্নীতি না করলে এত টাকা তারা কোথায় পাবেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে নিজ উপজেলায় কর্মরত আছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জুনু মিয়া বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুব্রত দেবনাথ বলেন, এ রকম কোনো অভিযোগ এখনো আমি পায়নি। তবে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশাত জেরিন ভাবনা ও জুনু মিয়া আমার কাছে তাদের বদলির জন্য আবেদন করেছেন। আমি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।
সিলেট অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার অভিযোগ পেয়েছি। বিধি মোতাবেক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।