পাথরের ভান্ডার সিলেটে। দেশের পাথরের চাহিদার বড় জোগানদাতা সিলেটের কোয়ারিগুলো। কিন্তু পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের জন্য আদালতের নিষেধাজ্ঞায় দীর্ঘদিন ধরে এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। ৫ আগস্টের পর স্থানীয় প্রভাবশালীরা মেতে ওঠেন কোয়ারি থেকে পাথর লুটে। ৫ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যেই কেবল জাফলং ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে বলে সেসময় জানিয়েছিল প্রশাসন। স্থানীয়দের দাবি বৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও গত পাঁচ মাসে দুই কোয়ারি ও আশপাশ এলাকা থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। লুটের এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত প্রভাবশালী কয়েক নেতা। পাথর লুটের ঘটনায় ইতোমধ্যে এক নেতার পদ স্থগিত করেছে দলটি। মামলা হয়েছে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।
বৈধভাবে উত্তোলন বন্ধ থাকলেও বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতার (বহিষ্কৃত) ছত্রচ্ছায়ায় চলছে লুট। ৫ আগস্টের পর পাথর লুটের সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা পেয়ে কেন্দ্র থেকে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানের পদ স্থগিত করা হয়। ওই সময় লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সের বিরুদ্ধে। পাথর লুটের ঘটনায় ওই তিন নেতাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। লুটের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সোমবার জাফলংয়ে সংঘর্ষও হয়।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, অন্তত ১৫ জনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারিগুলোর মধ্যে অন্যতম সিলেটের জাফলং ও ভোলাগঞ্জ। জাফলংয়ে পিয়াইন ও ভোলাগঞ্জে ধলাই নদী থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পাথর উত্তোলন হতো। যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে পাথরখেকোরা শুরু করেন পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে যান্ত্রিকভাবে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। পরে বেলার আরেকটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে সব পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়। ২০২০ সালের ৮ জুন খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো নিষিদ্ধ করে পাথর, সিলিকা বালু ও নুড়িপাথর উত্তোলন। আদালত ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর নিষেধাজ্ঞায় গত কয়েক বছর থেকে সিলেটের সবকটি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। এতে জাফলং ও ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় নদীর উৎসমুখে বিপুল পরিমাণ পাথর জমা হয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শিথিলতার সুযোগে পাথর কোয়ারিগুলোতে শুরু হয় লুট। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ৫ থেকে ১০ আগস্টের মধ্যে জাফলং থেকে ১২০ কোটি টাকা ও ভোলাগঞ্জ থেকে ২০ কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।